One percent theory!
বর্তমান সময়ে যাঁরা চাকুরিজীবী আর যাঁরা ব্যাবসা করেন, তাঁদের আয়ের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
চাকুরিজীবীদের (যাঁরা স্থায়ী) আয় মোটামুটি নিশ্চিত। মাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট বেতন পান। এবং সেই বেতন তিনি নিজস্ব (পারিবারিক/ ব্যাক্তিগত) প্রয়োজন অনুসারে খরচ করে থাকেন। বাৎসরিক একবার বা দুবার বোনাস পেতে পারেন। ইনক্রিমেন্ট পাবেন কিনা সেটা তাঁর পারফরম্যান্স এবং এম্প্লয়ারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে।
এর পাশাপাশি কিছু নেগেটিভ ইস্যুও বর্তমান। সময়ানুবর্তিতার অভাব, ফাঁকিবাজি, কাজের সময়ে আড্ডা, ইন্টারনাল পলিটিক্স, সহকর্মীদের পারস্পরিক অসহযোগিতা, যে কাজ ১০ মিনিটে হয়ে যেতে পারে, সেই কাজ ১০ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা… ইত্যাদি।
এই নেগেটিভ ইস্যুগুলোই যে কোন এম্প্লয়ারের হাতের অস্ত্র। এর ভিত্তিতেই কোন এম্প্লয়ার তার কর্মচারীদের রিপোর্ট কার্ড তৈরি করেন। কোন এম্প্লয়ি কখন Duty join করছে, কখন check out করছে; tiffin time, lunch break, miscellaneous break কতক্ষণ… সহকর্মীদের সঙ্গে কতটা সহযোগিতা করতে পারেন, কতগুলো ছুটি নিয়ে থাকেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগে কতদিন check in করেন, ছুটির পর কাজের স্বার্থে কতটা overtime করেন… এগুলো কিন্তু প্রতিটা এম্প্লয়ার নিজের প্রতিটি এম্প্লয়ির ক্ষেত্রে note down করে থাকেন।
ধরা যাক A কোম্পানিতে Mr X চাকরি করেন। Mr Y হলেন A কোম্পানির এম্প্লয়ার। Mr X মাসের 24 টা working day তেই সকাল 10:00 টার আগে check in করেছেন। Average check out timings 4:30 pm.
Regular break: 1:00 hrs.
Overtime:- No.
Delayed attendance:- No
Helped others:- Average.
Others:- Average.
Performance: Average.
Problem solving ability: Average.
Mr X এর ক্ষেত্রে Mr Y কিন্তু বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ইস্যু করার আগে এই রিপোর্ট কার্ডে চোখ রাখবেন। এর পাশাপাশি critical situation management এ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর decision making ability, leadership এগুলো কিন্তু ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার মূল কারণ।
মনে রাখতে হবে, Mr Y ইচ্ছামত যাকে তাকে promote করতে বা increment দিতে পারেন না। কারণ দিনের শেষে তিনিও একজন বেতনভোগী কর্মচারী। তাঁকেও কিন্তু তাঁর ওপরওয়ালার কাছে কৈফিয়ত দিতে হয়! সেখানে কিন্তু তাঁকে ক্ষমা ঘেন্না করার জন্য তাঁর ওপরওয়ালা বসে নেই!
সাধারণত কোন কর্মচারী ১০০ টাকা আয় যদি তাঁর এম্প্লয়ারকে দিতে পারেন, তাঁর বেতন ১ টাকা নির্ধারিত হয়। এই হারে দৈনিক তিনি ১০০০ টাকা উৎপাদনশীলতা দেখালে মাসিক সার্বিক উৎপাদনশীলতা ২৪ × ১০০০ = ২৪০০০/- টাকা। এবং One percent theory অনুযায়ী তাঁর বেতন স্কেল হবে মাসিক ২৪০/- টাকা।
আজকে যাঁরা চাকরি করে মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান, মনে রাখবেন তিনি তাঁর এম্প্লয়ারকে মাসিক ১০ লক্ষ টাকার সংস্থান করে দিতে পারেন বলেই তার ১ শতাংশ অর্থমূল্য বেতন পান।
সুতরাং চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার কাগজ, কলম, ক্যালকুলেটর নিয়ে অঙ্ক কষুন আপনি:-
১. দিনের কতটা সময় দিতে বাধ্য হচ্ছেন?
২. যে অঙ্কের অর্থ উপার্জন করছেন, তার কতটা ভোগ করতে পারছেন?
৩. আপনি কাজ করছেন, কাজ করতে গেলে ভুল ভ্রান্তি অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু তার জন্য সর্বসমক্ষে যে পরিমাণ গালি হজম করছেন, তথা অন্যের কাছে হাসির খোরাক হচ্ছেন; তার যৌক্তিকতা?
৪. নিজের সামান্য প্রয়োজন হলে অন্য সহকর্মীদের কতটা সহযোগিতা আপনি পান?
৫. ধরুন আপনার আয় ১০ টাকা। যদি আপনার আয় ১৫ টাকা হত, তাহলে হয়তো সন্তানের শিক্ষার জন্য যে ইএমআই-টা মাসে মাসে গুনতে হচ্ছে, তা গুনতে হত না। কিন্তু সমীকরণের হিসাবে আপনি কিন্তু তার থেকে অনেক বেশি পরিশ্রম করে অনেক বেশি উপার্জন করছেন কিন্তু বাড়িতে নিয়ে আসছেন তার শতাংশের ভগ্নাংশ। এর justification?
একটা কথা বিবেচনা করে দেখা দরকার। চাকরি করছেন ঠিক আছে। কিন্তু ব্যাবসা করতে আপনাকে কেউ আটকাচ্ছে না। ব্যাবসা করলে কিন্তু নিজের পরিশ্রমের ফল নিজেই ভোগ করতে পারবেন। যাঁরা চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের demotivate করছি না। আমার মতে তাঁরা নিজেদের উপযুক্ত মেধা, পরিশ্রম এবং উৎকর্ষতার বিনিময়ে, সামান্য কিছু পারিশ্রমিকের ভিক্ষামূল্যে অন্যের প্রাসাদ বানানোর জন্য বদ্ধপরিকর। এঁরা নিজেরা ৫০০০/- টাকার চাকরির জন্য এম্প্লয়ারকে মাসিক ৫ লক্ষ টাকার বাণিজ্যের সংস্থান করে দেবে সে ভি আচ্ছা… কিন্তু ৫০০০/- টাকা মূলধন খাটিয়ে নিজের ব্যাবসা শুরু করবে না।
এদের এই মানসিকতা পরিবর্তন হবে কি আগামীতে?